কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের অধীনস্থ বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ প্যাকেজিং’-এর ডেপুটি ডিরেক্টর (কলকাতা সেন্টার) ডঃ বিধান দাস ‘কর্মসংস্কৃতি’ পত্রিকাকে জানালেন-
এককথায় প্যাকেজিং হল- ‘Silent Salesman’৷ যে কোনো পণ্য বা পরিষেবাকে আর্কষণীয় করে ক্রেতার কাছে যথাযথভাবে উপস্থাপনা করাকেই বলে প্যাকেজিং৷ বর্তমানে বিপণনের দুনিয়ায় প্যাকেজিং-এর সাহায্যে অতি সাধারণ জিনিসকেও অসামান্য রূপ দেওয়া য়ায়৷ ক্রেতা টানতে দুধের কৌটো থেকে প্রসাধনী দ্রব্য সবকিছুকেই আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে৷ খাদ্যসুরক্ষা আইন অনুযায়ী, দ্রব্যের গুণমান ঠিক রাখার জন্য ভোজ্য তেল, লবণ-এর মতো খাদ্যদ্রব্য প্যাকেট ছাড়া খোলাভাবে বিক্রি করা যায় না৷ তাই খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে সঠিক পদ্ধতিতে উন্নতমানের প্যাকেজিং খুবই প্রয়োজন৷ গতানুগতিক পদ্ধতিতে যে প্যাকেজিং করা হয় সেখানে মাটির ভাঁড়, কাঠের বাক্স, পাট, বাঁশের ঝুড়ি বা পাতা মোড়ক হিসেবে ব্যবহার হয়- যেমন মাটির ভাঁড়ে দই ও মিষ্টি, কাঠের বাক্সে ফল ও চা, পাটের ব্যাগে ডাল, সবজি, বাঁশের ঝুড়িতে পান৷ বর্তমানে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চার রকম মোড়ক তৈরি করা হচ্ছে, যেমন কাগজের মোড়ক, যা ই-কমার্স সংস্থা বেশি ব্যবহার করে৷ কাঁচের প্যাকেজিংয়ে ওষুধ, আচার রাখা হয়৷ জলের বোতল, কোল্ড ড্রিঙ্কসে প্লাস্টিকের মোড়ক ব্যবহার করা হয়৷ ধাতুর মোড়ক দুই ধরনের হয়- অ্যালুমিনিয়াম ও টিন৷ অ্যালুমিনিয়ামের কৌটোতে কীটনাশকের প্যাকেজিং করা হয়৷ শালিমার নারকেল তেল, দুধের কৌটো, মিল্কমেড, ঘরের রঙ ইত্যাদি প্যাকেজিং করা হয় টিনের মোড়কে৷ প্ল্যাস্টিকের মোড়ক ব্যবহার করা হয় জলের বোতল বা খাদ্যদ্রব্য প্যাকেজিংয়ে৷ দ্রব্যের আয়ু যতদিন থাকে ততদিন পর্যন্ত যাতে মোড়ক দ্রব্যটিকে সুরক্ষিত রাখতে পারে তা দেখা হয়৷
প্যাকেজিং শিল্পের বাজার: প্যাকেজিং শিল্প একটি বিশেষ উদীয়মান শিল্প৷ ভারতে খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ শিল্প দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্যাকেজিং শিল্পে প্রশিক্ষিত কর্মীর চাহিদাও সমানুপাতিক হারে বাড়ছে৷ ভারতে প্যাকেজিং শিল্প প্রতি বছর ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে৷ সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতে প্যাকেজিং শিল্পের গ্রোথ রেট আগামী কয়েক বছরে দ্বিগুণ হবে৷ খাদ্য ও ওষুধ শিল্প ভারতে দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার সঙ্গে ই-কমার্স ও খুচরো শিল্পের রমরমা ভারতে প্যাকেজিং শিল্পকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে৷ শিল্পের প্রয়োজনে বিভিন্ন মেশিন ভারত থেকে বিদেশে রপ্তানি হওয়ায় প্যাকেজিং মেশিনারি ইন্ডাস্ট্রির গুরুত্ব ঊর্দ্ধমুখী৷ ‘ফুড সেফটি ল’ অনুযায়ী, খোলা বাজারে প্রসেসড ফুড বিক্রি করা যাবে না, সঠিক পদ্ধতিতে প্যাকিং করেই বিক্রি করতে হবে৷ ফলে প্যাকেজিংয়ে দক্ষ কর্মীর চাহিদা দিনে দিনে আরও বাড়বে৷ দেশীয় ই-কমার্স সংস্থা ফিল্পকার্ট ছাড়াও অ্যামাজন, আলিবাবা, স্ন্যাপডিল ও অন্য আরও অনেক অনলাইন শপিং পোর্টালে প্যাকেজিং বিশেষ প্রাধান্য পায়৷ যদি উৎপাদিত দ্রব্য ক্রেতার কাছে সরাসরি ও সুরক্ষিতভাবে পৌঁছে দিতে হয়, তাহলে প্যাকেজিং শিল্পের সাহায্য নিতেই হবে৷ অনলাইনে খাওয়ার অর্ডার দেওয়ার প্রবণতা শহর ও শহরতলিতে দিন দিন বাড়ছে৷ সমীক্ষা অনুযায়ী আগামী কয়েক বছরে এই প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পাবে৷ ফলে আগামীদিনে প্যাকেজিং শিল্পে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মীর চাহিদাও যে আকাশছোঁয়া হবে একথা বেশ জোরের সঙ্গেই বলা যায়৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছেলেমেয়েরা চাকরির পাশাপাশি নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে প্যাকেজিং-এর ব্যবসাও করতে পারেন৷ এককথায়, প্যাকেজিং-এ পেশাদারি দক্ষতা তৈরি করতে পারলে সুরক্ষিত কেরিয়ার অনেকাংশেই সুনিশ্চিত থাকে।
সরকারি স্তরে কোথায় প্যাকেজিং কোর্স পড়ানো হয়- স্বাভাবিকভাবেই প্যাকেজিং বিষয়টি শিক্ষাজগতে দ্রুত জায়গা করে নিয়েছে৷ কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের অধীনস্থ বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ প্যাকেজিং’-এ বিভিন্ন প্রকারের প্যাকেজিং কোর্স পড়ানো হয়। বর্তমানে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি, হায়দরাবাদ ও চেন্নাই সেন্টারে ২ বছরের ‘পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন প্যাকেজিং’ কোর্সে প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির জন্য দরখাস্ত গ্রহণ চলছে।
যোগ্যতা, অবেদন প্রক্রিয়া ও প্রার্থী বাছাই পদ্ধতি- বয়স হতে হবে ৩১ মে, ২০২৫ অনুযায়ী, ৩০ বছরের মধ্যে৷ তপশিলি সম্প্রদায় ৫ বছর ও ওবিসি প্রার্থীরা ৩ বছর বয়সের ছাড় পাবেন। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথেমেটিক্স, মাইক্রোবায়োলজি, লাইফ সায়েন্স, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োটেকনোলজি, জুলজি, বটানি, এগ্রিকালচার সায়েন্স, হর্টিকালচার সায়েন্স, ভেটেরিনারি সায়েন্স, ডেয়ারি সায়েন্স, ফুড সায়েন্স অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড নিউট্রিশন, ইলেকট্রনিক্স, এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স, পলিমার কেমিস্ট্রি / সায়েন্স, ফিশারি সায়েন্স, ন্যানো সায়েন্স বিষয়ে কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণিতে বিএসসি পাশ বা কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণিতে বিফার্মা / বিএসসি ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স পাশ বা কেমিক্যাল, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, সিভিল, বায়োকেমিস্ট্রি / বায়োকেমিক্যাল, ফুড টেকনোলজি, পাল্প অ্যান্ড পেপার টেকনোলজি, প্লাস্টিকস টেকনোলজি, পলিমার টেকনোলজি, অয়েল অ্যান্ড সার্ফেকট্যান্ট টেকনোলজি, কম্পিউটার টেকনোলজি / আইটি, এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং, ডেয়ারি টেকনোলজি / ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি, গ্রিন টেকনোলজি, ন্যানো টেকনোলজি বিষয়ে কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণিতে বিই / বিটেক পাশ ছেলেমেয়েরা আবেদনের যোগ্য৷ অনলাইনে https://iiponline.iip-in.com/UI/Pages/PGDP-Instructions.aspx পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। দরখাস্ত করার শেষ তারিখ ১৫ জুন, ২০২৫৷ দরখাস্ত ফি ৫০০ টাকা অনলাইনে বা ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে ‘in favour of Indian Institute of Packaging payable at Mumbai’-এর অনুকূলে জমা দিতে হবে। নির্দেশ অনুযায়ী পূরণ করা দরখাস্ত ও প্রয়োজনীয় প্রত্যয়িত নথিপত্র একত্রে একটি খামে ভরে তার উপর ‘IIPCET-2025, ONLINE Application’ লিখে স্পিড পোস্ট / রেজিস্টার্ড পোস্ট / ক্যুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠাতে হবে কলকাতা সেন্টারের ঠিকানায়। চলতি বছরের ২২ জুন কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি, হায়দরাবাদ ও আহমেদাবাদ কেন্দ্রে প্রবেশিকা পরীক্ষা (লিখিত) নেওয়া হবে। পরবর্তী ধাপে ইন্টারভিউ নিয়ে চূড়ান্ত মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে। ক্যাম্পাসিং-এর মাধ্যমে দেশ-বিদেশের ফুড, ফার্মা, এফএমসিজি (এমএনসিজি-সহ) ও অন্যান্য শিল্পসংস্থায় উচ্চবেতনের চাকরি লাভের বিশেষ সুযোগ রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রী বর্তমানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রখ্যাত শিল্পসংস্থায় সুনামের সঙ্গে কর্মরত।
ওয়েবসাইট ও যোগাযোগের ঠিকানা- আরওবিস্তারিত তথ্য জানতে দেখুন ওয়েবসাইট www.iip-in.com এবং যোগাযোগ করুন কলকাতা সেন্টারে এই ঠিকানায়- ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ প্যাকেজিং, কলকাতা সেন্টার, ব্লক- সিপি- ১০, সেক্টর ফাইভ, সল্টলেক, কলকাতা- ৭০০০৯১। ফোন- ০৩৩-২৩৬৭ ৬০১৬/০৭৬৩, ৮০১৭২১৯৯৩৯ (ডেপুটি ডিরেক্টর ও ব্রাঞ্চ হেড), ৮৩৫৫৯৫৭৪৬৯ (কোর্স কোঅর্ডিনেটর)৷